মৃত্তিকা সৃষ্টিতে আদি শিলা বা জনক শিলার প্রভাব
উঃ আদি শিলা থেকে মাটি সৃষ্টি হয় বলে এর অপর নাম জনক শিলা। এটি দুই প্রকার যথা- (A) আদি শিলার ওপর গঠিত মাটি বা স্থিতিশীল মাটি। যথা- কালো মাটি। (B) আদিশিলা থেকে দূরে স্থানান্তরিত মাটি বা পরিবাহিত মাটি। যথা- পলি মাটি। মাটি গঠনে আদি শিলার প্রভাবগুলি হলো- (i) সিলিকা সমৃদ্ধ আম্লিক শিলা (গ্রানাইট, নিস) থেকে অম্লধর্মী মাটি এবং ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ ক্ষারধর্মী আদি শিলা (ব্যাসল্ট, সার্পেন্টাইন) থেকে ক্ষারধর্মী মাটি সৃষ্টি হয়। (ii) বেলেপাথার, গ্রানাইট, কোয়ার্টজাইট আদি শিলা থেকে সৃষ্টমাটির গ্রথন স্থূল, প্রবেশ্য ও জলধারণ ক্ষমতা কম হয়। অপরদিকে, শেল, কাদাপাথর, চুনাপাথর যুক্ত আদিশিলা থেকে সৃষ্ট মাটির গ্রথন ক্ষূক্ষ্ণ হয় ও জলধারণ ক্ষমতা বেশি হয়। (iii) লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত যৌগ মাটিকে লাল রঙের করে তোলে। (iv) আদি শিলায় কোয়ার্টজ কণা বেশি থাকলে মৃত্তিকা ধূসর বা সাদা বর্ণের হয়। (v) চুনাপাথর ও মার্বেল থেকে রেন্টজিনা মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
মৃত্তিকা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূপ্রকৃতির প্রভাব
উঃ ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যেমন- উচ্চতা, ঢালের প্রকৃতি, দিক ও আকৃতির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের মাটির গঠন হয়ে থাকে। যথা- (i) ভূমির বিভিন্ন উচ্চতায় বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা ও উদ্ভিদের নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে আলাদা আলদা মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। উপত্যকার উচ্চ অংশ থেকে নিম্নঅংশ পর্যন্ত ঢাল অনুসারে বিভিন্ন ধরণের মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। একে মাটির ক্যাটেনা বলে। (ii) ভুমির ঢালের তিনটি অংশই মৃত্তিকা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন- (A) অপেক্ষাকৃত উচ্চ ঢালে জলনিকাশি ব্যবস্থা বেশি কার্যকরী হয় ফলে আবহবিকারজাত পদার্থ দ্রুত অপসারিত হয়ে মাটি গঠনে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, অনুস্রাবণ প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতিতে মাটির স্তর অপরিনত ও অগভীর হয় (প্রায় 50 সেমি-র কম)। (B) মধ্যম ঢাল যুক্ত অঞ্চলে জলনিকাশি ব্যবস্থা মধ্যম মানের সুতরাং মাটির স্তরের গভীরতা মধ্যম মানের। (C) সমতল ভূমিতে পৃষ্ঠ প্রবাহের হার কম এবং অনুস্রাবণ প্রক্রিয়া বেশি সুতরাং মাটির স্তরের গভীরতা বেশি এবং সুস্পষ্ট। (iii) ভূমির ঢালের দিক মাটি গঠনের ওপর প্রভাব ফেলে। যথা- উত্তর গোলার্ধের উচ্চভূমির দক্ষিণ দিকের ঢাল অপেক্ষাকৃত বেশি আলোকিত, উষ্ণ ও আর্দ্র হয়। ফলে মাটির গঠন সস্পষ্ট, সূক্ষ্ণ গ্রথন বিশিষ্ট মাটি সৃষ্টি হয়। (iv) ঢালের আকৃতি মাটি গঠনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক, যথা- উত্তল ঢালে ক্ষয়কার্য বেশি হয় ফলে মাটির স্তর অগভীর হয়, অন্যদিকে অবতল ঢালে সঞ্চয়কার্যের হার বেশি হওয়ায় স্তর পুরু ও সুস্পষ্ট হয়ে থাকে।