১. Location Theory বা স্থানিকতা তত্ত্ব কাকে বলে?
উঃ অবস্থান তত্ত্ব হল অর্থনৈতিক ভূগোল, আঞ্চলিক বিজ্ঞান, এবং স্থানীয় অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি অর্থনৈতিক কার্যাবলী কোথায় গড়ে উঠবে এবং কেন গড়ে উঠবে সেই সম্পর্কি যাবতীয় ধারনা পাওয়া যায় স্থানিকতা তত্ত্বের মাধ্যমে। স্থানিকতা তত্ত্বের প্রথম ধারনাটি পাওয়া যায় ১৮২৬ সালে জার্মান জোহান হেনরিচ ভন থুনেনের কৃষি অবস্থান তত্ত্ব থেকে। পরবর্তী কালে শিল্প স্থানিকতা তত্ত্বের শুরু ১৯০৯ সালে। প্রকাশিত আলফ্রেড ওয়েবারের ন্যূনতম ব্যয় তত্ত্বের মধ্য দিয়ে।
২. শিল্প অবস্থান তত্ত্ব (Industrial Location Theory) কী?
উঃ কোনো স্থানে শিল্প গড়ে উঠতে কাঁচামাল প্রাপ্তি, শক্তিসম্পদের জোগান ও বাজার-এই তিনটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। কোথায় কী ধরণের শিল্প স্থাপন করলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় নূন্যতম হবে, ক্রেতা সবচেয়ে কম দামে পণ্যটি পাবে ও মালিকের মুনাফা সর্বাধিক হবে তা নির্ণয় করা খুব কঠিন। তাই বিশেষজ্ঞরা শিল্প স্থাপনের বিভিন্ন মতপ্রকাশ করেছেন যা শিল্প স্থানিকতা তত্ত্ব নামে পরিচিত।
৩. উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শিল্প স্থানিকতা তত্ত্ব ও প্রবক্তার নাম লিখুন।
উঃ ন্যূনতম ব্যয় তত্ত্ব-আলফ্রেড ওয়েবার (১৯০৯), আপেক্ষিক অবস্থান তত্ত্ব-রিচার্ড হার্টশর্ন (১৯২৭), কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্ব-ওয়াল্টার ক্রিস্টালার (১৯৩৩), সর্বাধিক মুনাফা তত্ত্ব- অগাস্ট ল্যাশ (১৯৪০), নির্মান শিল্পের অবস্থান নীতি-জর্জ রেনার (১৯৪৭), শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থান তত্ত্ব ও অনুশীলন – মেলভিন গ্রিনহাট (১৯৫৬)।
৪. ভন থুনেনের “Der isolierte staat in Beziehung auf landwirts chaft und Nationalokonomic” গ্রন্থটির প্রথম খন্ডটি প্রকাশিত হয় ১৮২৬ সালে। তাহলে দ্বিতীয় খন্ডটি কবে প্রকাশিত হয়?
উঃ ১৮৫০ সালে।
৫. Der isolierte Staat (ইংরেজি সংস্করণের নাম The Isolated State) ধারণাটি কার অত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়?
উঃ ভন থুনেনের তত্ত্ব থেকে
৬. আলফ্রেড ওয়েবারের ন্যূনতম ব্যয় তত্ত্ব (Least Cost Theory) টি ১৯০৯ সালে জার্মান ভাষায় ‘Uber den Standor Der Industrien’ গ্রথে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর ইংরেজি সংস্করনটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল?
উঃ ১৯২৯ সালে।
৭. আলফ্রেড ওয়েবারের ন্যূনতম ব্যয় তত্ত্ব (Least Cost Theory) ইংরেজি সংস্করণটি কোন্ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়?
উঃ Theory of the Location of Industries
৮. অর্থনৈতিক কার্যাবলির অবস্থান সংক্রান্ত তত্ত্ব কে দিয়েছেন?
উঃ হুভার
৯. “শিল্প সেখানেই গড়ে উঠবে যেখানে লাভ সর্বাধিক”- উক্তিটি কার?
উঃ ল্যস
১০. ওয়েবারের মতে কাঁচামালের ওজনকে উৎপাদিত পণ্যের ওজন দিয়ে ভাগ করলে কী পাওয়া যায়?
উঃ বস্তুসূচন বা পণ্যসূচক বা মেটিরিয়াল ইনডেক্স।
১১. পণ্যসূচক কাকে বলে?
উঃ কোনো শিল্পে কাঁচামালের ওজন ও উৎপাদিত পণ্যের ওজনের অনুপাতকে পণ্যসূচক বলে। পণ্যসূচকের মান ১ বা ১-এর কম হলে কাঁচামাল বিশুদ্ধ (তুলা, পাট, রেশম) এবং ১-এর বেশি হলে অশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল (লোহা, আখ, তামা)।
১২. ওয়েবারের তত্ত্ব অনুসারে কাঁচামাল ও শিল্পের অবস্থানের মধ্যে সম্পর্ক কিরূপ?
উঃ তাঁর পণ্যসূচকের ধারনা অনুসারে, পণ্যসূচক ১-এরকম হলে শিল্পটি বাজার কেন্দ্রিক হয়, ১-এর বেশি হলে শিল্পটি কাঁচামাল কেন্দ্রিক হয় এবং ১-এর সমান হলে বাজার ও কাঁচামাল এরমধ্যবর্তী যে কোনো অবস্থানে গড়ে ওঠে।
১৩. সর্বত্র লভ্য কাঁচামাল কেন্দ্রিক শিল্প কোথায় গড়ে উঠার প্রবনতা বেশি?
উঃ উৎপন্ন পণ্যে্র সরবরাহ ব্যয় কমানোর জন্য শিল্পটি বাজারের নিকট গড়ে ওঠার প্রবণতা বেশি। যেমন- পানিয় জল প্রস্তুতকারী শিল্প।
১৪. সম পরিবহন ব্যয় রেখা বা আইসোটিম কাকে বলে?
উঃ ওয়েবার এর শিল্পস্থানিকতা তত্ত্বে কাঁচামাল ও উৎপন্ন পণ্যের সমপরিবহণ ব্য্যবিশিষ্ট স্থানগুলিকে যে বৃত্তাকার রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমপরিবহন ব্যয় রেখা বা আইসোটিম বলে।.
১৫. বিভিন্ন পরিবহন রেখার ছেদ বিন্দু যোগ করলে ওয়েবারের মতে কী পাওয়া যায়?
উঃ আইসোডোপেন বা মোট পরিবহন ব্যয় রেখা
১৬. আইসোডোপেন বা মোট পরিবহন ব্যয় রেখা?
উঃ ওয়েবারের শিল্প স্থানিকতা তত্ত্বে কাঁচামাল ও উৎপন্ন পণ্যের সমান মোট পরিবহন ব্যয় বিশিষ্ট স্থানগুলিকে যে উপবৃত্তাকার রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সম মোট পরিবহন ব্যয় রেখা বা আইসোডোপেন বলে।
১৭. Circular and cumulative causation- তত্ত্বটি কে দেন?
উঃ মিরডাল
১৮. অবস্থানগত খাজনা, অর্থনৈতিক খাজনা প্রভৃতি কথাগুলি কে ব্যবহার করেছেন?
উঃ ভন থুনেন
১৯. “শিল্পের অবস্থানের ওপর চাহিদার কোনো প্রভাব নেই”- উক্তিটি কার?
উঃ ওয়েবার
২০. অবস্থানিক ত্রিভূজ বা লোকেশনাল ট্রায়াঙ্গেল এর ধারণা কে দেন?
উঃ আলফ্রেড ওয়েবার
২১. অবস্থানিক ত্রিভূজ কী?
উঃ ওয়েবারের শিল্প স্থানিকতা তত্ত্বে পরস্পর থেকে সমদূরত্বে থাকা দুটি কাঁচামাল ও একটি বাজার এই তিন বিন্দুকে তিনটি সমদৈর্ঘ্যের সরলরেখা দ্বারা যুক্ত করে যে সমবাহু ত্রিভূজের মাধ্যমে শিল্পের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তাকে অবস্থানিক ত্রিভূজ বলে।
২২. কাঁচামালের সাথে অবস্থানিক ত্রিভূজের সম্পর্ক কিরূপ?
উঃ বিশুদ্ধ ও সর্বত্র লভ্য কাঁচামালের ক্ষেত্রে ত্রিভূজের বাজার শীর্ষের দিকে এবং অশুদ্ধ কাঁচামালের ক্ষেত্রে অধিকতর অশুদ্ধ কাঁচামালের শীর্ষের দিকে শিল্পটি গড়ে ওঠে।
২৩. ওয়েবারের অবস্থানিক ত্রিভূজ ধারণাটি কোন্ তত্ত্বের ভিত্তিকে প্রদান করা হয়েছে?
উঃ ভ্যারিগনন এর ‘যান্ত্রিক মডেল (Mechanical Model) বা গণিত ও পদার্থবিদ্যার ‘বল সামান্তরিক উপপাদ্য’ (Theorem of the parallelogram of forces) -র ভিত্তিতে ওয়েবার অবস্থানিক ত্রিভূজের মাধ্যমে শিল্পটির অবস্থান নির্দেশ করেছেন।
২৪. একটি বাজার ও দুটি সর্বত্র লভ্য কাঁচামালের ক্ষেত্রে শিল্পটি কোথায় গড়ে উঠবে?
উঃ উৎপাদিত দ্রব্যের পরিবহন খরচ লাঘবের জন্য শিল্পটি বাজারের নিকটে স্থাপিত হবে।
২৫. একটি বাজার, একটি সর্বত্রলভ্য কাঁচামাল ও একটি কেন্দ্রীভূত বিশুদ্ধ কাঁচামালের ক্ষেরে শিল্পটি কোথায় স্থাপিত হবে?
উঃ এক্ষেত্রে সর্বত্র লভ্য কাঁচামালের পরিবহন ব্যয় শূন্য, অপর পক্ষে বিশুদ্ধ কাঁচামাল ও উৎপন্ন দ্রব্যের পরিবহন ব্যয় সমান। ফলে এক্ষেত্রে অন্যন্য ব্যয় বিবেচনা করে শিল্পটি বাজার অঞ্চলে গড়ে উঠবে। কারন সেক্ষেত্রে পণ্য উৎপাদন ব্যয় শূণ্য হয়ে যায়। যেটি শিল্প স্থাপনের পক্ষে লাভজনক।