মাধ্যমিক ভূগোলের প্রশ্ন উত্তর পর্ব-১

১) জলচক্র কাকে বলে? জলচক্রর অংশ হিসাবে নদীর ভূমিকা লেখ।

উঃ. জলবিদ্যার অন্যতম বিষয় হল জলচক্র। সমুদ্র ও ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলে জলের সঞ্চালন এবং ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভের মধ্যে পুনরায় ফিরে আসার যে চক্রাকার আবর্তন প্রক্রিয়া, তাকে জলচক্র বলে।

অর্থাৎ,বাষ্পীভবনের মাধ্যমে সমুদ্র ও বায়ুমন্ডলের মধ্যে জলের সঞ্চালন ও বৃষ্টিপাতের দ্বারা ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভে জলের আবার ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে জলচক্র বলে।

  • সূত্রঃ- P=E+R [যেখানে-P=Precipitation(অধঃক্ষেপণ), E=Evaporation(বাষ্পীভবন), R=Run Off(জলপ্রবাহ)]
  • জলচক্রএ অংশ হিসাবে নদীঃ- নদী অববাহিকার জলচক্রের প্রধান প্রধান অংশগুলি হল-

১)পর্বত্য অঞ্চলের বৃষ্টি বা তুষার গলা জল একমাত্র নদীর মাধ্যমে সমুদ্রে পতিত হয়।

২)মৃত্তিকার জলের জোগান বৃষ্টির দ্বারা পুরন হলেও, নদী বন্যার সময় প্লাবন সমভুমিতে যথেষ্ট জল সরবরাহ করে।

৩)নদী ভৌমজলের ভান্ডার পূর্ণ করতে সাহায্য করে।

৪)নদী থেকেও পুনরায় কিছুটা জল বাষ্পীভবন হয়, ফলে জলের ভারসাম্য বজায় থাকে।

৫)রিল,গালি,নদীপ্রবাহ, এই প্রক্রিয়াগুলির মধ্য দিয়ে নদী অববাহিকায় আগত ও নির্গত মোট জলের মধ্যে সমতা নির্ধারিত হয়।এইভাবে নদী অববাহিকায় জলচক্র সম্পুর্ণ হয়।

২) গঙ্গা নদীকে আদর্শ নদী বলা হয় কেন?

উঃ. কাজ অনুসারে উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একটি নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (ক) পার্বত্যগতি,  (খ) মধ্যগতি  (গ) নিম্নগতি।

(ক) পার্বত্যগতি: পার্বত্য গতিতে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয় সাধন, এবং ক্ষয় সাধনের সঙ্গে সঙ্গে নদী বহনের কাজ ও করে থাকে।

(খ) মধ্যগতি: মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন। এই পর্যায়ে নদী অবক্ষেপন ও করে, আবার কূল ভাঙ্গে ও গড়ে। 

(গ) নিম্নগতি: নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ। এখানে নদী প্রধানত নদী বাহিত শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি জমা করে এবং সমভূমি ও ব-দ্বীপ ভূমি গড়ে তোলে।

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশে যে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থা, যথা:-  উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতিপ্রবাহ ও বিভিন্ন গতিপ্রবাহে নদীর কাজ সুস্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রাকৃতিক দিক থেকে ‘আদর্শ নদী বলা হয়। উত্তরে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এই দীর্ঘ গতিপথে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই (উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন ) সুস্পষ্ট ভাবে বিদ্যমান, তাই গঙ্গানদীকে আদর্শ নদী বলা হয়। গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি পার্বত্য পথে গঙ্গার গতিকে উচ্চগতি বলে। হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশকে গঙ্গার গতিপ্রবাহকে গঙ্গার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ বলে ।আর মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের পর থেকে গঙ্গাসাগরের মোহনা পর্যন্ত অংশকে গঙ্গার গতিপ্রবাহকে নিম্ন বা বদ্বীপ প্রবাহ বলে।

৩) নদীর বিভিন্ন কাজ কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উঃ. নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ গতিপথে নদী প্রধানত তিন রকমের কাজ করে থাকে, যথা- (ক) ক্ষয়সাধন, (খ) বহন, ও (গ) অবক্ষেপন বা সঞ্চয় । এই তিন ধরনের কাজ নির্ভর করে নদীর সামর্থ্যের ওপর। নদীর সামর্থ্য নির্ভর করে প্রধানত তিনটি বিষয়ের ওপর, যথা:- ১) জলের পরিমাণ,  ২) জলের গতিবেগ ও  ৩) গতিপথের ঢাল। এগুলি বৃদ্ধি পেলে নদীর কর্মক্ষমতা বিশেষত ক্ষয় ও বহন অনেকাংশে বেড়ে যায়। আবার এগুলি কমে গেলে নদীর অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়কাজ অনেক বেশি হয়।

৪) পর্যায়িত নদী কাকে বলে?

উঃ. পর্যায়িত নদী হল এমন এক নদী, যার ক্ষয় ও সঞ্চয় করার ক্ষমতা নেই, কেবলমাত্র ক্ষয়িত দ্রব্যগুলি বহন করে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত করে। যদি কোনো নদী ক্ষয় অথবা সঞ্চয় কোনোটিই না করে নিয়ে চলে তবে সেই নদীকে পর্যায়িত নদী বলে।

৫) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কীভাবে সৃষ্টি হয় লেখ।

উঃ. নদীর মধ্যগতিতে কোনো নদী বাঁকের মাঝের অংশ মূল বাঁক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘোড়া বা গোরুর ক্ষুরের মতো অবস্থান করলে তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

সৃষ্টিঃ- অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ যেভাবে সৃষ্টি হয় সেটি নিচে পর্যায়িত ভাবে বর্ণনা করা হল-

অ) প্রথম পর্যায়-প্রাথমিক পর্যায়ে নদী যখন নিম্নভূমিতে প্রবাহিত হয় তখন নদী গুলি আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়। এই বাঁকের দুটি অংশ আছে, উত্তল ও অবতল অংশ।

আ) দ্বিতীয় পর্যায়-এরপর নদীবাঁকের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত জলধারা বাঁকের দুই তীরে বাধা পায় এবং অবতল অংশ ক্ষয়করে এবং উত্তল অংশে সঞ্চিত করে।

ই) তৃতীয় পর্যায়-এই ভাবে নদীর বাঁক ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ঈ) এরপর নদী অতিরিক্ত বাঁকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে একটি সোজা পথে প্রবাহিত হয়। এবং আগের বাঁকটি প্রধান নদী থেকে বচ্ছিন্ন হয়ে ঘোড়ার পায়ের খুঁড়ের মতো ভূমিরূপ গঠন করে।

->উদাহরণঃ- পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে অনেক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।

Leave a Comment