মাধ্যমিক ভূগোলের প্রশ্ন উত্তর পর্ব-2

৬) জলপ্রপাত সৃষ্টির কারন গুলি লেখ।

উঃ. নদীর গতিপথের ঢাল হঠাৎ নেমে গেলে নদীর জলরাশি সরাসরি উপর থেকে নিচে পতিত হয়। একে জল প্রপাত বলে। জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণ গুলি হল-

অ).চ্যুতি- নদীর গতিপথে হঠাৎ কোনো  চ্যুতির সৃষ্টি হলে সেখানে খাঁড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। এবং জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- জাম্বেসী জলপ্রপাত।

আ).ঝুলন্ত উপত্যকা- হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্যে নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাত গঠন করে। উদাহরণ-যোসেমতি জলপ্রপাত।

ই).কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে কোমল শিলা বেশি ক্ষয় পেয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ-আমেরিকার নায়াগ্রা জলপ্রপাত।

ঈ).মালভূমির প্রান্ত ভাগের খাঁড়া ঢালে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ-সুব্ররণরেখার হুড্রু জলপ্রপাত।

৭) “জলপ্রপাত পশ্চাদপসরণ করে”- ব্যাক্ষা কর।

উঃ. জলপ্রপাত ক্রমশ উৎসের দিকে সরে যায়। তার কারণ ও প্রক্রিয়াটি পর্যায় ক্রমিক ব্যাখ্যা করা হল-

অ) নদী পার্বত্য অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলার সমান্তরালে অবস্থান করলে জলপ্রপাত গঠন করে।

আ) কঠিন শিলার নিচে কোমল শিলা বুদবুদ ও অভিকর্ষ প্রক্রিয়ায় দ্রুত ক্ষয় করে।

ই) এর ফলে কোমল শিলার ওপর কঠিন শিলা বেশ কয়েকদিন ঝুলে থাকার পর ভেঙ্গে পড়ে, তখন জলপ্রপাত পিছু হটতে থাকে এবং ক্রমশ নদীর উৎসের দিকে সরে যায়।

    উদাহরন-পৃথিবীর বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত এভাবে ১১ কিমির বেশি পথ পিছিয়ে গেছে।

8) নদীর ষষ্ঠঘাতের সূত্র

উঃ. নদী উপত্যকার ঢালের সঙ্গে নদীর গতিবেগের এবং নদীর গতিবেগের সঙ্গে নদীর বহনক্ষমতার সম্পর্ক বর্তমান।

   কোনো নদীর একটি নির্দিষ্ট গতিবেগের,যে পরিমাণ বহনক্ষমতা থাকে,কোনো কারণে সেই নদীর জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বা ঢালের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলে তার বহন করার ক্ষমতা 26=64গুণ বৃদ্ধি পায়।অর্থাৎ ঘন্টায় 2কিমি গতিবেগ প্রবাহিত কোনো নদীর যে পরিমাণ বোঝা টানতে পারে,সেই নদী দ্বিগুণ বেগে বা ঘন্টায় 4 কিমি বেগে প্রবাহিত হলে, সমপরিমাণ জল 64গুণ বেশী পরিমাণ বোঝা টানতে পারে।নদীর গতিবেগের সঙ্গে নদীর বহন ক্ষমতার এই অনুপাতকে নদীর “ষষ্ঠঘাতের সূত্র”(Sixth Power Law) বলে।

     নদীর গতিবেগ বৃদ্ধি না পেয়ে যদি কেবলমাত্র জলের পরিমানই দ্বিগুন হয়,তবে নদীর বহন ক্ষমতা কেবলমাত্র দ্বিগুন হয়,64 গুনই হয় না।

৯) জল প্রবাহ পরিমাপের একক কী অথবা কিউসেক ও কিউমেক বলতে কী বোঝো?

উঃ. কোনো নদীর জলপ্রবাহের একক হল দুই প্রকার।যথা-

অ) কিউসেকঃ- নদীর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয়, ব্রিটিশ পদ্ধতিতে নদীপ্রবাহ পরিমাপের এই একককে কিউসেক বলে। কিউসেক হল কিউবিক ফুট/সেকেন্ড।

আ) কিউমেকঃ- নদীর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয়, সেই পদ্ধতিতে নদীপ্রবাহ পরিমাপের এই একককে কিউমেক বলে। কিউমেক হল কিউবিক মি/সেকেন্ড।

১০) জলপ্রপাতের শ্রেনিবিভাগ কর।

উঃ. প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট অনুযায়ী জলপ্রপাত তিন প্রকার-

অ).কাসকেডঃ- অনেক সময় নদী ছোটো ছোটো জলপ্রপাত সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয় তাকে কাসকেডা বলে।উদাঃ উত্তর আয়াল্যান্ডের টিয়ার্জ অফ দ গ্লেন।

আ).খরস্রোত বা র‍্যাপিডঃ- কোনো নদী তার জল কে নিয়ে যখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে ধাপে নেমে আসে, তখন যে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয় তাকে খরস্রোত বলে। খরস্রোত কাসকেডা অপেক্ষাও ছোটো হয়।উদাঃ আফ্রিকার জাইরে নদীতে এরুপ ৩২টি খরস্রোত দেখা যায়।

ই).ক্যাটার‍্যাক্টঃ- যে জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে এবং প্রচুর জল প্রবাহিত হয় তাকে ক্যাটার‍্যাক্ট বলে। উদাঃ নীলনদের খাটুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত ৬টি ক্যাটার‍্যাক্ট আছে।

১১) নদীর বহন ক্ষমতা কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উঃ. নদীর উচ্চ প্রবাহের ক্ষয়জাত পদার্থসমুহ জলস্রোতের সাথে মোহনার দিকে পরিবাহিত হয়, যেটি চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর-

অ).নদীপথের ঢালঃ- নদীর ঢাল বেশি হলে জলের গতিবেগ তথা নদীর বহন ক্ষমতা বেশি হবে।

আ).নদীর গতিবেগঃ- নদীর গতিবেগ বৃদ্ধি পেলে নদীর বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ই).জল প্রবাহের পরিমানঃ- জল প্রবাহের পরিমান বেশি হলে নদীর বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ঈ).নদীর বোঝার পরিমানঃ- নদীতে বোঝার পরিমান বেশি হলে বহন ক্ষমতা কম হয়।

উ).বস্তুর ওজনঃ- নদী বাহিত বস্তুর ওজন বেশি হলে সেই বস্তু তত কম দুরত্বে পরিবাহিত হয়।

১২) নদীর গিরিখাত ও ক্যানিয়নের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী ?

  বিষয়     গিরিখাত      ক্যানিয়ন
১.সঙ্গাউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা অত্যন্ত গভীর ও স্ংকীর্ণ হলে তাকে গিরিখাত বলে।  শুষ্ক অঞ্চলের গভীর ও স্ংকীর্ণ উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বলে।
২.ক্ষয়কাজনদীতে পার্শক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়।বৃষ্টিপাতের অভাবে নিম্নক্ষয় খুব বেশি হয়,পার্শ্বক্ষয় প্রায় হয় না।
৩.অঞ্চলগিরিখাত সৃষ্টি হয় বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলেক্যানিয়ন সৃষ্টি হয় বৃষ্টিহীন ‘প্রায় শুষ্ক’ মরুপ্রায় উচ্চভূমি অঞ্চলে
৪.আকৃতিইংরেজী ‘V’ অক্ষরের মতো হয়ক্যনিয়নের আকৃতি ইংরেজি  ‘I’ অক্ষরের মতো
৫.উদাহরণপেরুর এল ক্যানন দ্য কালকা।কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

১৩) Vanishing island-কী?

উঃ. যেসব দ্বীপ জলের তলায় ডুবে যায় এবং আবার জলের অপর জেগে ওঠে। এইসব দ্বীপ কে বলে Vanishing island। সুপারিভাঙা,লোহাচড়া,দক্ষিণ তালপাট্টি এবং কাবাসগাডি, এই চারটি দ্বীপকে একত্রে Vanishing island। এর চারটি দ্বীপ সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় ক্ষয় প্রভৃতি কারণে ক্রমশ জলের তলায়  

তলিয়ে যাচ্ছে। তবে বর্তমানে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে এদের জেগে উঠতে দেখা গিয়েছে।

১৪) ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশগুলি লেখ।

উঃ. পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ নদীতে ব-দ্বীপ গড়ে ওঠে, কিন্তু সব নদীর মোহনায় ব-দ্বীপ গড়ে ওঠেনা। কারণ এর জন্য কিছু অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন হয় যেগুলি হল-

অ). গতি বেগ- সমভুমি অঞ্চলে নদীর গতিবেগ কম হতে হবে।

আ). ঢাল- নদীর মোহনায় মৃদু ঢাল হওয়া প্রয়জন।

ই) বায়ুপ্রবাহ- নদীর স্রোতের বিপরীত দিকে বায়ুপ্রবাহ হলে ব-দ্বীপ গঠনে সুবিধা হয়।

ঈ). জোয়ারভাটা- মোহনায় জোয়ারভাটার প্রকোপ কম থাকতে হবে।

উ). পলি- নদীবাহিত পলির পরিমান বেশি হতে হবে।

ঊ). ক্ষেত্রমান- নদী অববাহিকার আয়তন বেশি হলে পলির পরিমান বেশ হয়। তাই ক্ষেত্রমান বেশি হওয়া দরকার।

ঋ). উপনদী- উপনদীর সংখা বেশি হলে বস্তুভার বেশি হয়, যা ব-দ্বীপ সৃষ্টির সহায়ক।

ঌ). লবণতা- সমুদ্র জলের লবণতা বেশি হলে পলি দ্রুত সঞ্চিত হয়।

Leave a Comment