Geography Important Question: Volcanism

1. অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাত (Volcanism) বলতে কি বোঝেন?

উঃ ভূ-বিজ্ঞানী উলভ্‌রিজ ও মরগ্যান-এর মতে,- “অগ্ন্যুৎপাত বলতে সমস্ত আগ্নেয় প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যাদের মাধ্যমে তরল শিলা বা ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠে নির্গত হয় এবং স্ফটিকাকার বা অর্ধস্ফটিকাকার আগ্নেয় শিলারূপে জমাট বাঁধে”। অর্থাৎ, ভূ-অভ্যন্তরের গলিত ও সান্দ্র পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় উপাদান নিঃশব্দে বা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের দূর্বল স্থান বা ফাটল বা ছিদ্র পথ দিয়ে বেরিয়ে এসে বা ভূ-অভ্যন্তরের নিচে সঞ্চিত হয়ে নানান ভূমিরূপ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাত বলা হয়। বৈশিষ্ট্যঃ (i) অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাত ও আগ্নেয়গিরি দুটি সমার্থক নয়। অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাত হল একটি প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, আগ্নেয়গিরি হল অগ্ন্যুদ্‌গমজাত পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ। (ii) ভূপৃষ্ঠে অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাতের উৎস হল আগ্নেয়গিরি।

2. আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? আগ্নেয়গিরির বিভিন্ন অংশগুলি কী কী?

উঃ ভূ-বিজ্ঞানী ম্যাকডোনাল্ডের মতে “প্রবল ভূ-আলোড়নে ভূ-ত্বকে যে ফাটল বা ফিসার সৃষ্টি হয়, তা ক্ষুব্ধমন্ডল পর্যন্ত বিস্তৃত হলে ভূ-গর্ভের আগ্নেয় পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে নির্গত হয়ে জমাট বেঁধে যে শঙ্কু আকারের ভূমিরূপ গঠন করে, তাকে আগ্নেয়গিরি বলে”। ভূপৃষ্ঠে অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাতের উৎস হল আগ্নেয়গিরি। উদাহরণ– ইটালির ভিসুভিয়াস, জাপানের ফুজিয়ামা প্রভৃতি। একটি আদর্শ আগ্নেয়গিরি কয়েকটি অংশ নিয়ে গঠিত। যেমন– (i) ম্যাগমা গহ্বর- যেখানে ম্যাগমার উৎপত্তি ঘটে তাকে ম্যাগমা গহ্বর বলে। (ii) রন্ধ্রপথ- যে পথ দিয়ে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে তাকে রন্ধ্রপথ বলে। (iii) জ্বালামুখ- আগ্নেয়গিরির যে অংশ দিয়ে ছাই, গ্যাস প্রভৃতি বের হয় তাকে জ্বালামুখ বলে। (iv) আগ্নেয় শঙ্কু- প্রধান জ্বালামুখের চারপাশে লাভা, ছাই, শিলাখন্ড প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে শঙ্কু আকৃতির ভূমিরুপকে আগ্নেয় শঙ্কু বলা হয়।

3. অগ্ন্যুতপাতের কারণগুলি লিখুন।

উঃ ভূঅভ্যন্তরের গলিত ও সান্দ্র পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় উপাদান নিঃশব্দে বা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের দূর্বল স্থান বা ফাটল বা ছিদ্র পথ দিয়ে বেরিয়ে এসে বা ভূ-অভ্যন্তরের নিচে সঞ্চিত হয়ে নানান ভূমিরূপ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাত বলা হয়। এর কারণ গুলি হল- (i) ভূ-আলোড়নে শিলায় অনেক ফাটল বা দুর্বল স্থান সৃষ্টি হয়। এই দুর্বল স্থান গুলি দিয়ে ম্যাগমা সহজের ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসতে পারে। (ii) গুরুমন্ডলে অভিসারী পাত সীমান্তে ভূ-ত্বকীয় পাতের অনুপ্রবেশে অগ্ন্যুৎপাত হয়। (iii) ভূ-অভ্যন্তরের গভীরত বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্র ও বৃদ্ধি পায়। এর সাথে ওপরের চাপ কমে গেলে শিলার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয় ফলে শিলা তরল অবস্থা ধারণ করে আয়তনে বেড়ে গিয়ে তা ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে আসতে চায়। (iv) গুরুমন্ডলের অধিক উষ্ণতাযুক্ত অঞ্চলগুলিকে হট স্পট বলে। এই সমস্ত অঞ্চলে ম্যাগমা ভূত্বকের দুর্বল অংশ দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায়। (v) ভূ-অভ্যন্তরে অত্যাধিক চাপ জনিত কারণে বাষ্প ও গ্যাস ম্যাগমা রূপে ওপরে ওঠে আসে।

4. প্রণালী অনুসারে অগ্ন্যুৎপাতের শ্রেণিবিভাগ করুণ।

উঃ ভূ-অভ্যন্তরের গলিত ও সান্দ্র পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় উপাদান নিঃশব্দে বা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের দূর্বল স্থান বা ফাটল বা ছিদ্র পথ দিয়ে বেরিয়ে এসে বা ভূ-অভ্যন্তরের নিচে সঞ্চিত হয়ে নানান ভূমিরূপ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুদ্‌গম বা অগ্ন্যুৎপাত বলা হয়। অগ্ন্যুৎপাতের প্রণালী বা লাভা নির্গমনের পথ অনুসারে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (i) কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুদগম ও (ii) বিদার অগ্ন্যুদগম।

(i) কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুদগম- মাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে গলিত তরল ম্যাগমা যখন আগ্নেয়গিরির প্রধান জ্বালামুখ বা গৌনজ্বালামুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে, তখন তাকে কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুদগম বলে। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট আগ্নেয়গিরিকে কেন্দ্রীয় শ্রেণির আগ্নেয়গিরি বলে। বৈশিষ্ট্য– (a) এর এক বা একাধিক জ্বালামুখ থাকে। (b) একটি নলাকৃতি পথের মধ্য দিয়ে ম্যাগমা নির্গত হয়। (c) এই জাতীয় অগ্ন্যুদগমে সাধারণত বিস্ফোরণ ঘটে। উদাহরণ– ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্যারেন এই জাতীয় অগ্ন্যুদগমের উদাহরণ।

(ii) বিদার অগ্ন্যুদগম- কোনোরকম বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূ-ত্বকের অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তীর্ণ ফাটল দিয়ে যে অগ্ন্যুদগম ঘটে তাকে বিদার বা ফিসার অগ্ন্যুদগম বলে। বৈশিষ্ট্য– (a) এই অগ্ন্যুদগম সাধারণত বিস্ফোরণহীন। (b) এই অগ্ন্যুদমের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের কোনো শঙ্কু গঠন হয়না। (c) বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে লাভা প্রবাহের ফলে সৃষ্টি হয়। কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার কিমি দীর্ঘ হতে পারে (d) এর ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি হল- লাভাক্ষেত্র, লাভা সমভূমি, লাভা মালভূমি প্রভৃতি। উদাহরণ- ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি বা ডেকানট্র্যাপ মালভুমি। (e) আইসল্যান্ডে এই ধরণের অগ্ন্যূৎপাত সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়, তাই এই প্রকার অগ্ন্যুদগম কে আইসল্যান্ডীয় শ্রেণির অগ্ন্যূৎপাত বলা হয়।

5. ম্যাগমা বা লাভার অবস্থান অনুসারে অগ্ন্যুদগমের শ্রেণিবিভাগ করুণ।

উঃ ভূ-গর্ভের ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে ম্যাগমা বেরিয়ে এসে কোথায় জমাটবদ্ধ হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে অগ্ন্যুদগমকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (i) নিঃসারী অগ্ন্যুদগম, (ii) উদ্‌বেধী অগ্ন্যুদগম।

(i) নিঃসারী অগ্ন্যুদগম- ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে উত্তপ্ত ম্যাগমা, কর্দম, গ্যাস, ছাই, প্রস্তরখন্ড, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি ভূ-অভ্যন্তরের প্রবল চাপে বিস্ফোরন ঘটিয়ে বা শান্তভাবে ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়, এইরূপ অগ্ন্যুদগমকে নিঃসারী অগ্ন্যুদগম বলা হয়। শ্রেণিবিভাগ- এই প্রকার অগ্ন্যুদগম দুই প্রকার। যথা- (a) কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুদগম (b) বিদার অগ্ন্যুদগম। বৈশিষ্ট্য- (i) নলপথে বা একাধিক ফিসারের মধ্য দিয়ে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়। (ii) অগ্ন্যুদগমের সময় বিস্ফোরণ হতে পারে আবার নাও হতে পারে। (iii) এর ফলে ভূপৃষ্ঠে আগ্নেয়গিরি, লাভা মালভূমি, লাভা সমভূমি প্রভৃতি গঠিত হয়।

(ii) উদ্‌বেধী অগ্ন্যুদগম- ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে ম্যাগমা ফাটলের মধ্য দিয়ে ওপরে উঠে এলেও না ভূ-পৃষ্ঠে নির্গত হতে না পেরে, ভূ-ত্বকের মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে। এই ধরণের অগ্ন্যুদগমকে উদ্‌বেধী অগ্ন্যুদগম বলা হয়। বৈশিষ্ট্য– (i) ম্যাগমা ভূ-গর্ভস্থ বিভিন্ন ফাটল বা দারণের মধ্যে জমাটবদ্ধ হয়। (ii) এর ফলে ডাইক, সিল, ব্যাথোলিথ প্রভৃতি উদ্‌বেধী ভূমিরূপ গঠন করে। (iii) বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ফলে ক্ষয়কার্য ঘটে এই উদ্‌বেধী ভূমিরূপ গুলি নগ্নীভূত হয়।

6. অগ্ন্যুৎপাতজাত বিভিন্ন পদার্থ গুলি কী কী?

উঃ ভূ-পৃষ্ঠে ম্যাগমার নির্গমনের প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুদগম বলা হয়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নানান প্রকারের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ নির্গত হয়। যেগুলি হল- (i) কঠিন পদার্থ- আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কঠিন পদার্থ গুলি হল- পাইরোক্লাস্ট বা আগ্নেয় শিলাখন্ড, আগ্নেয় ভস্ম, ল্যাপিলি, আগ্নেয় বোম, স্কোরিয়া, ট্রেফ্রা, তুফ, ইগনিমব্রাইট, নুয়ে অর্দেন্তি, পিমিস, আগ্নেয় ব্লক প্রভৃতি। (ii) তরল পদার্থ- লাভা হল আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত একমাত্র তরল পদার্থ। লাভা তিন প্রকারের হয় যথা- আম্লিক লাভা, ক্ষায়কীয় লাভা, ও মধ্যবর্তী লাভা। (iii) গ্যাসীয় উপাদান- আগ্নেয়গিরি ছিদ্র পথে নানান বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ নির্গত হয়। যেমন- কার্বন-ডাই-অক্সাইড, বোরিক অ্যাসিড, সালফার বাষ্প, ফিউমারোল, ফসফরাস, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি।

7. লাভা কাকে বলে? লাভার শ্রেণিবিভাগ করুণ।

উঃ আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূ-পৃষ্ঠে বেড়িয়ে আসা গলিত বা অর্ধগলিত সিলিকেটময় পদার্থ বা ম্যাগমা কে লাভা বলা হয়। শ্রেণিবিভাগ- লাভা প্রধানত তিন প্রকার যথা- (i) আম্লিক লাভা– এতে সিলিকার পরিমান 70-80%। উদাঃ রায়োলাইট, অ্যান্ডিসাইট। (ii) মধ্যবর্তী লাভা- সিলিকার পরিমান- 50-60%। উদাঃ গ্রানাইট লাভা। (iii) ক্ষারকীয় লাভা- সিলিকার পরিমান 50%-র কম। উদাঃ ব্যাসল্ট লাভা। বৈশিষ্ট্য- (i) লাভা ভূ-পৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়। (ii) লাভা শীতলীভবন পদ্ধতিতে কেলাস গঠন করে। (iii) লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে বিভিন্ন ধনণের নিঃসারী আগ্নেয় শিলা গঠন করে।

Leave a Comment